Sensation method of Homeopathy part - 2
পূর্ব প্রকাশের পর........
ডাঃ রাজন শংকরণের হোমিওপ্যাথির সেনসেশান মতবাদ ২য় পর্ব
একিউট মায়াজম (রাজন শংকরণ)
রাজন শংকরণ বললেন- একিউট মায়াজমের ওষুধগুলোর মধ্যে রয়েছে এক বিশেষ
অনুভূতি “বাইরের জগৎ থেকে প্রচণ্ড রকম একটি হুমকি”(There is a strong
threat from the outside world.)। এই হুমকির প্রতিক্রিয়াটিও যথেষ্ট
শক্তিশালী, তাৎক্ষণিক এবং স্নায়ুর উপর প্রতিবর্তী ক্রিয়া উৎপাদনকারী (The
reaction to this threat is strong, instinctive and reflex)।
একিউট মায়াজমের শারীরিক প্রকাশ ঘটে হঠাৎ এবং প্রচণ্ড প্রতিক্রিয়া রূপে,
ফলে সৃষ্টি হয় একটি আশঙ্কাজনক পরিস্থিতি, এর ফলে রোগী এবং তার পাশে যারা
থাকে তাদের সবার মাঝেই সৃষ্টি হয় আতঙ্কের। দেহে এবং মনে উভয় স্তরেই ঘটে
এর প্রকাশ। একিউট মায়াজম সাধারণত দৈহিক কাঠামোগত ক্রনিক পরিবর্তন ঘটায়
না, তবে প্যাথলজি বৃদ্ধি ঘটাতে পারে, যদি জেনেটিক প্রবণতা জোরালো ভাবে
থাকে।
কালবৈশাখী ঝড়ের গতির সাথে বা মুক্তিযুদ্ধের কমান্ডো আক্রমণের সাথে একিউট মায়াজমের তুলনা করা যায়।
শিশু ও বাচ্চাদের মধ্যে একিউট মায়াজম বেশী দেখতে পাওয়া যায়, কারণ হুমকি ও
আশঙ্কাজনক পরিস্থিতি প্রায়ই শিশু ও বাচ্চাদের মধ্যে দেখা যায়। একিউট
মায়াজমের প্রতিক্রিয়া হচ্ছে নির্দোষ, স্বভাবজাত ও শিশুসুলভ প্রতিক্রিয়া।
(The reaction of the acute miasm is an innocent, instinctive, childlike
reaction.) কিন্ত যখন পূর্ণ বয়স্ক দেহে একিউট মায়াজম পাওয়া যায়,
যেখানে প্রতিক্রিয়া রূপে সুনির্দিষ্ট শিশুসুলভ আচরণ থাকে (certain
childishness in the response)।
এই হুমকি, আশঙ্কা এবং শিশুসুলভ আচরণ একিউট মায়াজমকে চিনতে ও ওষুধ নির্বাচন
করতে সাহায্য করে। মেটেরিয়া মেডিকা ও রেপার্টরীতে একিউট শব্দ দ্বারা বহু
লক্ষণ ও রোগের উল্লেখ আছে।
সোরিক মায়াজম (রাজন শংকরণ)
সোরিক মায়াজমের অবস্থা একটু জটিলতর, এখানে রোগীকে সফলতার জন্য সংগ্রাম
করতে হয় (struggle in order to succeed), সোরার বিভ্রান্তির রয়েছে দুটো
উপাদান :-
১. বাইরের চাপ (Stress from outside)
২. এই বাইরের চাপের সাথে মোকাবেলা করতে নিজের ক্ষমতা সম্পর্কে সন্দেহ থেকে
উদ্বেগ। সে হয় আশাবাদী, ব্যর্থ হলেই পৃথিবীর সবকিছুই শেষ হয়ে গেল এরূপটি
মনে করে না। (Anxiety from doubt about his own ability/capability to deal
with the stress. He is hopeful, and failure does not mean the end of
the world. )
মনের দিক থেকে এরা তীক্ষ্ণ, পর্যবেক্ষণ-শীল, লক্ষণের বর্ণনা দেয়
চমৎকারভাবে। এরা প্রচুর স্বপ্ন দেখে, স্বপ্নে ব্যক্তি জীবনে ঘটে যাওয়া
সংগ্রাম, বিফলতা, উদ্বেগ এর প্রতিফলন থাকে। এদের দৈহিক ও মানসিক স্তরে থাকে
হ্রাস-বৃদ্ধির আধিক্য, সার্ব-দৈহিক লক্ষণের আধিক্য, আকাঙ্ক্ষা ও বিতৃষ্ণার
স্বচ্ছ মাত্রা, প্যাথলজিক্যাল পরিবর্তন সাধারণত উভমুখী। সংগ্রামী এক জীবন,
যা দেখা যায় তরুণ ও যুবা বয়সে। নিরাপত্তা-হীনতা, অসন্তুষ্টি,
সংবেদনশীলতা, ভবিষ্যৎ সম্পর্কে উৎকণ্ঠা ইত্যাদি থাকা সত্ত্বেও এদের মধ্যে
সব সময় আশা থাকে, হতাশা ভর করতে পারে না, পরিস্থিতি যাই হোক না কেন। যেমন
বাঙালীদের ১৯৭১ এর মুক্তির সংগ্রাম, স্বাধীনতার সংগ্রাম, ২০১৩ সালের
শাহবাগের প্রজন্ম চত্বরে রাজাকারের ফাঁসির দাবীর সংগ্রাম।
সোরাকে বুঝতে হলে সালফার, সোরিনামকে বুঝতে হবে।
সাইকোটিক মায়াজম (রাজন শংকরণ)
সাইকোটিক ওষুধের অনুভূতি হচ্ছে, “আমি এই পরিস্থিতিটি সামলাতে অক্ষম, আমার
মধ্যে খারাপ কিছু একটা ঘটছে”. এরা চায় দুর্বলতা লুকিয়ে রাখতে, গোপনীয়তা
বজায় রাখতে, তাদের থাকে বদ্ধমূল ধারণা, এরা অন্তর্মুখী, সোরিকের চাইতে কম
কর্মক্ষম এবং বেশী চাপা স্বভাবের। সাইকোসিসের আক্রমণ বাইরের কারণে নয়
আভ্যন্তরীণ। সোরার মত অসংখ্য বিষয়ে হ্রাস-বৃদ্ধি বা সার্ব-দৈহিক লক্ষণের
প্রচুরতা সাইকোসিসে থাকে না। সাইকোসিসে অতি প্রতিক্রিয়া (Over-activity),
অতিবৃদ্ধি (Overgrowth), হাইপার-ইমিয়্যুন রেসপন্স, হাঁপানির মত বদ্ধমূল
স্থায়ী রোগাবস্থা, কাঠামোগত পরিবর্তন, সব কিছুতেই বাড়তি ইত্যাদি
বৈশিষ্ট্য থাকে। সহগামী সার্ব-দৈহিক এবং আকাঙ্ক্ষা ও বিতৃষ্ণার লক্ষণ খুবই
সীমিত। সাইকোসিসে স্রাব বের করে দেয়ার প্রবণতা খুবই উল্লেখযোগ্য।
সাইকোসিস মায়াজম মধ্য বয়সে প্রাধান্য বিস্তার করে, যৌবন অবস্থায়
দীর্ঘকাল ধরে সংগ্রাম (সোরা) চালিয়ে সে তখন নিজের মধ্যে অনেক ত্রুটি দেখতে
পায়, সব ত্রুটিকে অতিক্রমের চেষ্টা করেও সফলতা পায়নি, নিজকে তখন গুটিয়ে
নেয়, রক্ষণশীল হয়ে যায়, নিজের চারপাশে একটি প্রাচীর তৈরি করে সেখানেই
সীমাবদ্ধ বা গোপনীয় থাকতে চায়, পরিস্থিতির সাথে সমন্বয় করেই তখন আর
যুদ্ধ করতে চায় না। ১৯৭১ সালের সংগ্রামী, বীর মুক্তিযোদ্ধা হয়েও পরাজিত
রাজাকারকে মন্ত্রী হিসাবে স্যালুট করে, রমজানের ইফতার পার্টিতে যোগ দেয়,
তাদের সাথে আপোষ করে, নিজের ব্যক্তিত্বকে বিলীন করে গর্বিত বাঙালীকে হেয়
করায়। রাজাকারের বংশধরেরা গোপন স্থান থেকে আক্রমণ করে মানুষকে গুপ্ত খুন
করে, গাড়ীতে আগুন দেয়, রগ কাটার রাজনীতি করে, বাচ্চু রাজাকারের মত
পালিয়ে যায়, বিচারের মুখোমুখি হতে পিঠটান দেয়, ব্লগার আহমেদ রাজীব
হায়দারকে পেছন থেকে আক্রমণ করে হত্যা করে।
নোসড ওষুধ মেডোরিনাম সাইকোসিস মায়াজমের কেন্দ্রীয় বৈশিষ্ট্যের
প্রতিনিধিত্ব করে। অন্যদিকে থুজাকে হ্যানিম্যান প্রধান এন্টি সাইকোটিক ওষুধ
বলেছেন।
সিফিলিস মায়াজম (রাজন শংকরণ)
সিফিলিটিক মায়াজমের বিভ্রান্তি এমন, যেন এমন একটি পরিস্থিতির মোকাবেলা
করছে, যা থেকে রক্ষা পাওয়ার কোন উপায় নেই, এই অবস্থাটি তাদের চরম হতাশা ও
নৈরাজ্যের দিকে নিয়ে যায়। পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণের পূর্বের
অবস্থার সাথে এর তুলনা করা যায়। পাকিস্তানিরা “আদমী নেই মাংতা, মাট্টি
মাংতা হায়” বলে সমগ্র বাঙালীকে হত্যা করতে চেয়েছিল, বাঙালীর সব কিছুকে
ধ্বংস করে ধূলায় মিশিয়ে দিতে চেয়েছিল, মরণপণ চেষ্টা দ্বারা বাঙালীর
স্বাধীনতার সংগ্রামকে নিঃশেষ করে দিতে চেয়েছিল, এরা ৩০ লক্ষ বাঙালীর
হত্যাকারী হয়, ২ লক্ষ মা-বোনের সম্ভ্রম নষ্টকারী হয়। সিফিলিস পাকিস্তানি
বাহিনীর মত চরম পন্থা গ্রহণকারী, ভয়ঙ্কর খুনী, স্বৈরাচারী, অমানবিক
নির্যাতনকারী, প্রচণ্ড দুঃখবাদী। কাঠামো ধংসকারী পীড়া- ক্ষত, ক্যারিজ,
গ্যাংগ্রীন, আত্মহত্যা, রক্তপাত ইত্যাদির মাধ্যমে নিজকে ধংষ করার দিকে
পরিচালিত করা সিফিলিসের বৈশিষ্ট্য।
গাড়ী পোড়ানো, বোমা মারা, অগ্নি সংযোগ করে সম্পদ বিনষ্ট করা, জনসভায়
গ্রেনেড হামলা করে নিরপরাধ মানুষ হত্যা করা সিফিলিটিক রোগীদের বৈশিষ্ট্য।
জঙ্গিবাদের ধারক বাহক বাংলা ভাই, শায়খ আবদুর রহমান, খুনী এরশাদ শিকদার,
প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশ, জল্লাদ ইয়াহিয়া খান, হিটলার
হচ্ছে সিফিলিটিক মায়াজমে আক্রান্ত রোগীদের উদাহরণ।
রাজন শংকরণের অন্য মায়াজম সমূহ –
রাজন শংকরণ অন্য কিছু নামের মায়াজমেরও উল্লেখ করেছেন এবং নিজের মত ব্যাখ্যা করেছেন, যেমন-
সাব একিউট/টাইফয়েড মায়াজম – একিউট ও সোরিক মায়াজমের মধ্যবর্তী মায়াজম। ব্রায়োনিয়া ওষুধ এ অবস্থার প্রধান ওষুধ।
ম্যালেরিয়া মায়াজম - একিউট এবং সাইকোটিক মায়াজমের মধ্যবর্তী মায়াজম। চায়না ওষুধ এ অবস্থার প্রধান ওষুধ।
রিং-ওয়ার্ম মায়াজম – সোরা ও সাইকোসিসের মধ্যবর্তী মায়াজম। ক্যাল্কেরিয়া
সালফুরিকা ও ক্যাল্কেরিয়া সিলিকেটা এই মায়াজমের প্রধান ওষুধ।
টিউবারকুলার মায়াজম – সাইকোসিস এবং সিফিলিসের মধ্যবর্তী মায়াজম। ড্রসেরা এই অবস্থার প্রধান ওষুধ।
লেপ্রসি মায়াজম – টিউবারকুলার ও সিফিলিটিক মায়াজমের মধ্যবর্তী মায়াজম। সিকেলি কর এই অবস্থার প্রধান ওষুধ।
ক্যান্সার মায়াজম – সাইকোটিক ও সিফিলিটিক এর মাঝখানে অবস্থান করে। কার্সিনোসিন ও নাইট্রিক এসিড এই অবস্থার প্রধান ওষুধ।
রাজন শংকরণ রচিত গ্রন্থাদি পাঠ করলে এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন,
বিশেষ করে দি সাবস্ট্যান্সেস অব হোমিওপ্যাথি এবং দি সোল অব রেমিডিজ নামক
গ্রন্থ।
চলবে....................
ডাঃ এ. কে. এম. রুহুল আমিন
প্রভাষক
বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথিক মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল, ঢাকা
সভাপতি, হ্যানিম্যান ফাউন্ডেশান বাংলাদেশ।